আকতার হোসেন, সময় সংবাদ বিডি-
কুমিল্লাঃ মুরাদনগর ভূমি অফিসে হিন্দুদের রেখে যাওয়া ২০ কোটি টাকা মুল্যের জমি দু’জনের নামে অবৈধভাবে নামজারি (খারিজ) করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১২ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে জমিটি স্থানীয় চিহিৃত এক ভূমিদস্যু ও তার স্ত্রীর নামে খারিজ করে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় দারোরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সঞ্জিত কুমার দাস গুপ্ত বলাই মাস্টার, সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম, ইউপি আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ইউপি স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো: জাকির হোসেন, ওয়ার্ড আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক মো: মিজানুর রহমান, মো: সহিদউল্লাহ, মো: আনোয়ার হোসেন ও মো: মাঈন উদ্দিন।
শনিবার সকালে ভূক্তভোগীদের পক্ষ্যে দারোরা ইউপি’র ১নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক মো: মিজানুর রহমান মুরাদনগর উপজেলা প্রেসক্লাব ও উপজেলা সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ জানান।
মুরাদনগরের দারোরা মৌজায় ৪৩১ দাগে ২৪ শতক, ৫৩১ দাগে ৪৬ শতক, ৫৩২ দাগে ২৪ শতক, ৫৩৫ দাগে ২৯ শতক ও দক্ষিন দিঘিরপাড় ১১২/১৭৩ মৌজায় ৮৩ খতিয়ানের ১২৯ দাগে পুকুর ৪৭ শতক, ১২৮ দাগে নাল ৪৫ শতক, ১৭১ দাগে নাল ৫১ শতক, ১৭২ দাগে ভিটি ১৫ শতক, ১৭৪ দাগে নাল ১০ শতক, কেমতলী ১০৯/১৮৬ মৌজায় ৫৭ খতিয়ানের ২৯ দাগে নাল ৪৮ শতক, ১৭ খতিয়ানে ২৮ দাগে নাল ৫৭ শতক, ১০২ খতিয়ানে ২০ দাগে নাল ৩৪ শতক, ২৮ খতিয়ানে ১৯ দাগে নাল ১৪ শতক, দারোরা ১১৩/১৭২ মৌজায় ৫২৪ খতিয়ানের ৪৩১ দাগে বাড়ি ৮ শতক, ৫৪০ খতিয়ানের ৪৩১ দাগে বাড়ি ৪ শতক, ৩০২ খতিয়ানের ৪৩১ দাগে বাড়ি ৪ শতক, ৫২৫ খতিয়ানে ৪৩১ দাগে বাড়ি ৮ শতক, ৪৬০ খতিয়ানের ৪১৮ দাগে পুকুর ৪ শতক, পালাসুতা ১১১/১৭৪ মৌজায় ৪৪১ খতিয়ানের ১০৫৯ দাগে ভিটি ৩ শতক, ১০৫৯ ও ১৫৮২ দাগে পুকুর ২৫ শতক, ১০৫৯ ও ১৫৮১ দাগে ভিটি ২ শতক ভূমি আনুমানিক ২০ কোটি টাকা মূল্যের ওই জমিগুলোর অবস্থান।
লিখিত বক্তব্যে মো: মিজানুর রহমান জানান, খতিয়ানের সবক’টি জমিই হিন্দুদের ফেলে যাওয়া ব্রিটিশ প্রপার্টি (ভিপি) ও অর্পিত সম্পত্তি, তার অধিকাংশ জমিগুলোই সংখ্যালগু হিন্দুদের দখলে ও জোত বহাল রেখেই ওই মৌজা ও খতিয়ানের পুরো জমিই অবৈধ কাগজপত্র তৈরী করে আরএস নামীয় মালিকানা কাগজপত্র সৃজন করে জনৈক দারোরা গ্রামের মৃত আবদুল গফুরের ছেলে বিএনপি নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু খ্যাত নান্নু মিয়া ও তার স্ত্রী শিউলী বেগমের নামে পৃথক একটি খারিজ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন মুরাদনগর ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মো: তাজুল ইসলাম, ভূমি অফিসের প্রভাবশালী বর্মচারী মো: দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের অফিস সুপার (ওএস) রফিকুল ইসলাম।
মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, নান্নু মিয়া, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মো: তাজুল ইসলাম, ভূমি অফিসের প্রভাবশালী বর্মচারী মো: দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের অফিস সুপার (ওএস) রফিকুল ইসলাম ভূমি অফিসের সরকারি ভলিউম নিয়ে প্রতিপক্ষ নান্নুর বাসায় গিয়ে ১২ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ভলিউমের পাতা নেই, পাতা ছেঁড়া এই মর্মে রিপোর্ট তৈরী করে এ কাজটি করার চেষ্টা করেন।
এরপর রোববার বিষয়টি অবগত হয়ে তিনি এবং স্থানীয় সচেতনমহল তাৎক্ষণিকভাবে এই নামজারি জমাভাগের আদেশ বাতিলের জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী বর্মকর্তা ও এসি ল্যান্ড (সহকারী ভূমি অফিসার) অফিসে আবেদন করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মনসুর উদ্দিন নামজারি জমাভাগের আলোচিত নথিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য এসিল্যান্ড জাকির হোসেনকে নির্দেশ দেন।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মনসুর উদ্দিন অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করাবো।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে নান্নু মিয়ার মুঠোফোন কল করে কথা বলতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।