স্টাফ রিপোর্টার, সময় সংবাদ বিডি-
ঢাকাঃ দেশব্যাপী ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল- অবরোধে মুখ থুবড়ে পরেছে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা। প্রতিদিনই পেট্রল বোমার আঘাতে পুড়ে মরছে মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস-ট্রাক-লঞ্চ-ট্রেনসহ কোনো পরিবহনই আর নিরাপদ নয়। এ অবস্থায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব কিছুই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি হরতালের নাশকতায় ছাত্র-ছাত্রী আহত ও নিহত হওয়ায় ঘটনায় সবার মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। ফলে হরতালে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বেশ কিছু নামীদামী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে চরম বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষরা বলছেন অবরোধ-হরতালে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। যার ফলে তারা ঠিকমত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছেনা। এবং অবরোধ-হরতালে ক্লাস সিডিউল ব্যহত হওয়ার ফলে সময় মত সিলেবাস শেষ করতে পারছেনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে বারবার পরিবর্তন করতে হচ্ছে পরীক্ষার সময়সূচী। এতে করে সামনের বছরগুলোতে দেখাদিবে সেশনজট। যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক বিরাট বিপর্যয়।
ছাত্র- ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে আপাতত ক্লাস এবং পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা করেছে বেশকিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
গত সোমবার তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী নর্থ সাউথ ক্যাম্পাসে ক্লাস বর্জন করে হরতালে নর্থ সাউথ প্রশাসনকে ক্লাস বন্ধ রাখার দাবী জানায়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে হরতালে সকল ক্লাস বন্ধ রাখার সিধান্ত নেয়া ।
একই দাবিতে হরতালে ক্লাস এবং মিডটার্ম পরীক্ষা না নেওয়ার দাবিতে ২ নম্বর ক্যাম্পাসের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। এসময় বিভিন্ন ব্যানার হাতে নিয়ে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আপাতত ক্লাস এবং পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
এনিয়ে হরতালে দেশের কয়েকটি শীর্ষ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, ইস্ট-ওয়েস্টসহ আরও কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস ও পরীক্ষা চালু রাখার সিধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে তাদের সিধান্ত থেকে ফিরিয়ে নেয়।
এদিকে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সারাদিন আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলেও ক্লাস ও পরিক্ষা বাতিলের ঘোষণা দিতে চাচ্ছেনা ইউআইটিএস বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষ শুক্রবার ও শনিবার ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে হরতালে রেগুলার ক্লাস করার জন্য নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়।
পক্ষান্তরে ইউআইটিএস শিক্ষার্থীরা ক্লাস এবং মিডটার্ম পরীক্ষা না নেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে আবেদন জানান এবং পরবর্তীতে জোরালো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যায়।
আইইউবির এক শিক্ষার্থী জানান, হরতালে ক্লাস করতে না পারায় ও সিলেবাসও শেষ না হওয়ার ফলে তারা এই আন্দোলন করছে ।
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি এক সিন্ডিকেট সভায় (শাবি) শুক্রবার ও শনিবার ক্লাস পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ব্যাপারে শাবি উপাচার্য জানান, অবরোধের কথা বিবেচনা করে আপাতত শুক্রবার ও শনিবার পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা ও দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের ছোবল থেকে রক্ষার স্বার্থে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে যতদ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষরা।