বাড়িপ্রধান খবর‘লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’:খালেদা

‘লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’:খালেদা

খালেদা

স্টাফ রিপোর্টার, সময় সংবাদ বিডি-

ঢাকাঃবিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন ‘অভীষ্ট লক্ষ্যে’ না পৌঁছা পর্যন্ত চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন জোটটির প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। আন্দোলনে শরিক হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আন্দোলন ছাড়া দেশবাসীর সামনে আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। তাই ক্ষমতার জন্য নয়, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন এবং সুবিচার নিশ্চিত করতে এ আন্দোলন চলতে থাকবে।’

 

বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

 

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ঠিক এক মাসের মাথায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার এ কথা জানালেন খালেদা জিয়া। দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন গত ৫ জানুয়ারি নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। সেখান থেকেই অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন তিনি।

 

খালেদা জিয়া বলেন, ‘গত একটি বছর ধরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ক্রমাগত আহ্বান জানিয়েছি। তারা কোনো কিছুতে কর্ণপাত করেনি। বরং সীমাহীন অত্যাচার উৎপীড়ন চালিয়ে গেছে।’

 

তিনি অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে করায়ত্ব করা রাষ্ট্রক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হীন অভিপ্রায়ে তারা কোনো রকম সমঝোতায় রাজি হয়নি। এমনকি নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের কথা তারা স্বীকার করতেও রাজি নয়। তারা মনে করে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পথেই জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে দমিয়ে রাখা সম্ভব।

 

দেশবাসীর ‘আশা-আকাক্সক্ষার’ প্রতিফলন ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে, দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘একটি যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা না পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

 

ছেলের অকাল মৃত্যুতে মানসিকভাবে শোকাবহ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন, এ কথা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই বিপর্যয়ের ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই আমার সঙ্গে কী ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে তা-ও সকলেই দেখছেন। সুপরিকল্পিতভাবে সর্বমুখী চাপ ও অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করে তারা আমাকে জনগণ ও নেতা-কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সচেষ্ট। কিন্তু আমি সবাইকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, কোনো অনৈতিক চাপ বা ভীতির মুখে আমি নত হব না, ইনশাআল্লাহ্। যেকোনো পরিস্থিতি বা পরিণতির জন্য আমি তৈরি আছি।’

 

খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মুষ্টিমেয় স্তাবক ও সুবিধাভোগী দ্বারা পরিবেষ্টিত সরকার জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এসব বাহিনীর নিয়ন্ত্রণভার দলবাজ ও বিতর্কিত কতিপয় কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়ে তাদের মাধ্যমে জনগণ ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহের ওপর জুলুম-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।’

 

৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেওয়ার পর এ পর্যন্ত বিএনপির ৩৩ নেতা-কর্মী হত্যা এবং ১৭ হাজারের বেশি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি প্রধান।

 

আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে গুলি চালিয়ে, সাজানো বন্দুকযুদ্ধে ও নৃশংস অন্যান্য পন্থায় হত্যা করেছে। আটকের পর নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মী। তাদের বাড়ি-ঘরে হানা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন ও হেনস্তা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।

 

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক, এ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এ আন্দোলনকে বেগবান করার নীতিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু আন্দোলন চলাকালে যাত্রীবাহী ও অন্যান্য যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে নিরপরাধ মানুষের ওপর বীভৎস আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’ এই ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

 

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি পরিষ্কার ভাষায় আবারো বলতে চাই, মানুষের জীবন নিয়ে অপরাজনীতি আমরা করি না। হত্যা ও লাশের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এমন হীন ও নৃশংস অপরাজনীতি আমরা কখনো করব না। এখন যারা ক্ষমতা আঁকড়ে আছে তারাই অতীতে আন্দোলনের নামে যাত্রীবাহী বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে ডজন ডজন মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। লগি-বৈঠার তা-বে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছে। একটার বদলে দশটা লাশ ফেলার প্রকাশ্য নির্দেশ দিয়েছে।’

 

অতীতে আওয়ামী লীগের লাগাতার হরতালে এসএসসি পরীক্ষা তিন মাস পর্যন্ত পেছাতে বাধ্য করেছে, উল্লেখ করে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা পবিত্র রমজান মাসে পর্যন্ত হরতাল করেছে। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে। ইয়াসমিন হত্যার প্রতিবাদের নামে দিনাজপুরে পুলিশ ব্যারাক জ্বালিয়ে দিয়েছে। তদানীন্তন বিডিআরের পানি সরবরাহের লাইন কেটে দিয়েছে। এখনকার নৃশংস ঘটনাবলীও তাদের অতীত কার্যকলাপের সঙ্গেই মিলে যায়।’

 

ক্ষমতাসীনরা দেশব্যাপী নাশকতার জন্য ‘সুপরিকল্পিতভাবে’ এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপি প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, অতীতের ধারাবাহিকতায় নিরাপরাধ মানুষকে নৃশংস পন্থায় হত্যা করে তার দায়ভার চাপিয়ে আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচারমাধ্যমে অপপ্রচার এবং বিরোধী দলকে সে সুযোগে দমন করার অপরাজনীতি ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ্। বাংলাদেশের মানুষ আর এত বোকা নেই।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Must Read

spot_img