স্টাফ রিপোর্টার, সময় সংবাদ বিডি-
ঢাকাঃ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্দেশে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, রাজনীতির সমস্যা রাজনীতিকদের উদ্যোগেই সমাধান সম্ভব। নাগরিক সমাজের উদ্যোগে নয়।
সম্প্রতি রাজনীতির সংকট নিরসনে নাগরিক সমাজের উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে।
তাদেরকে বুঝতে হবে একটি আলোচনায় মধ্যস্থতা করার জন্য বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হয়। তারা সকল পক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এখন তাদের মনে হয়েছে অমুককে বাদ দিতে হবে, তমুককে বাদ দিতে হবে। কারণ তাদের অনেকে দল করে।
এক্ষেত্রে এ ধরনের সংকট নিরসনে নিজের নিরপেক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, দেশপ্রেম এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বিষয়টি মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত ছিল বলে দাবি করেন সুরঞ্জিত।
তাহলে এ বিপর্যয়টি হত না দাবি করে এই প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান বলেন, ‘জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংকট নিরসনে প্রথম যেটি করতে হয়। সেটি হল, আগে সকল পক্ষকে ভায়োলেন্স বন্ধ করতে বলতে হয়।
কিন্তু সেটি না করে প্রথমে আলোচনার কথায় গিয়েছেন। আলোচনার জন্য তো একটি সমতল ভূমির প্রয়োজন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না করে তাদের মতো বিচক্ষণ ব্যক্তিরা কেন এটি করলেন, তা অত্যন্ত আশ্চার্যের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘তবে আপনার প্রশ্নটি, নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন কবে হবে’ এমন মন্তব্য করে গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের প্রসঙ্গ তুলে সুরঞ্জিত আরো বলেন, ‘আমরা বলছিলাম, এই নির্বাচনটি হতে দিন। পরবর্তীতে আরেকটি নির্বাচন হবে। আপনি কি নির্বাচনটি হতে দিয়েছেন। কিংবা হওয়ার জন্য কোন সহযোগিতা করেছেন। বরং নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য অনেক ধ্বংসলীলা চালিয়েছেন।
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, এখন বিএনপিকেই বুঝতে হবে। সহিংসতার পথ বেয়ে বিশ্বের কোনো আন্দোলনই খুব বেশী দূর এগোয়নি, আপনিও এগুতে পারবেন না।
সুরঞ্জিত বলেন, সহিংসতা পরিহার করতে হলে জামায়াত-শিবিরকে পরিত্যাগ করা অনিবার্য। জামায়াতকে একদিকে টিকিয়ে রাখবেন আরেকদিকে নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বলবেন। দুটোই একসঙ্গে চলতে পারে না।
‘দেশে নাশকতা, সহিংসতা বা টেরোরিজমের জনক হচ্ছে জামায়াত’ এমন দাবি করে তিনি বলেন, জামায়াতের এজেন্ডা আর বিএনপির এজেন্ডা এক হতে পারে না। জামায়াত বাংলাদেশকেই স্বীকার করে না। জামায়াত আবারও বাংলাদেশকে পাকিস্তান করতে চায়। সেই কারণে জামায়াত একাত্তরের যুদ্ধে যে পরাজিত হয়েছিল, সেটি এখনও মেনে নিতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, এই ৪৩ বছরে জামায়াত ধনে-মানে ও অন্যান্য দিক দিয়ে অনেক পরিপুষ্ট হয়েছে, পরিপক্ক হয়েছে। ফলে এই জামায়াতকে নিয়ে আপনি (খালেদা জিয়া) যতদূরই এগোতে চান। তা পারবেন না। যেটুকু পারবেন, রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে, দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে সুরঞ্জিত আরো বলেন, ‘আপনার ভূমিকার কথা একটু আপনিই বলুন। আপনার ভূমিকায় তো কোন মানবিকতার ছাপ নাই। কেবলমাত্র আছে ক্ষমতায় লোভ। শুধুমাত্র নাগিনী-যোগিনীর মূর্তি ধারণ করে দানবীয় জীঘাংসার মধ্যে উঠে এসে ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে ক্ষমতালোভী হয়ে উঠছেন।
‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখুন, রাখতেই হবে’ এমন আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নইলে মানুষের যে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। কালকেও ঢাকায় দুইজনকে ধরে মানুষ তার নিজস্ব অবস্থানে বিচার করে দিয়েছে।
আপনাকে স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমরা মনে করি না, কেবল প্রশাসনিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। যেমন করে ঢাকা শহরকে জাগিয়ে তুলেছি, ঠিক তেমনিভাবে গোটা বাংলাদেশ-গ্রাম বাংলাকে আমরা জাগিয়ে তুলবো। অতি তাড়াতাড়ি দেখবেন, মানুষকে নামিয়ে আপনার এই সহিংসতা, নাশকতাকে পরাজিত করা হবে এবং গণতন্ত্রের বিজয় হবে।
খন্দকার ডা. ইমদাদুল হক সেলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইস্কান্দার শামীম মীর্জা, হুমায়ুন কবির মিজী প্রমুখ।