রাসেল সরকার-
রাজশাহীঃ আপন ভাইকে ফাঁসিয়ে সম্পত্তির দখল নিতে বড় বোন ও আরেক বোনের দুই ছেলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একের পর এক নাটকিয় কান্ড ঘটিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ভাই ও তার ছেলে এবং নাতির নামে ভাংচুর ও হামলার মিথ্যা অভিযোগ করেছেন পুলিশের তদন্ত কেন্দ্রে। ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের কোন্দা গ্রামে। গত ৭ (আগস্ট) ভাই-বোন ও আরেক বোনের দুই ছেলের মধ্যে কোন্দলের সৃষ্টি হয়। এটাকে কেন্দ্র করে গত ৮ আগস্ট বিকেলে উপজেলা খালগ্রাম বাজারে ভাইয়ের ছেলে ও বোনের দুই ছেলের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোন্দা গ্রামের মৃত নহির উদ্দিন মল্লিকের তিন মেয়ে জাহানারা বিবি, রাহেলা বিবি, বিবিজান বিবি ও এক ছেলে মফিজ উদ্দিন মল্লিক। বাবা নহির মল্লিক তার জমির একটা অংশ একমাত্র ছেলেকে রেজিস্ট্রি করে দেন। আর কিছু জমি ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য রেখে মৃত্যুবরন করেন। বাবার মৃত্যুর পর তিন মেয়ে ১২ দাগে ৩৬ শতাংশ জমির ভাগ পান। এর মধ্যে জাহানারা বিবির অংশের ১২ শতাংশ জমি ভাই মফিজ মল্লিকের কাছে বিক্রি করে দেন। বাকি দুই বোনের অংশ ২৪ শতাংশ অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু বোনদের জমির পরিমান কম হওয়ায় ভাই মফিজ মল্লিক তার মানবিক হয়ে দুই বোন রাহেলা বিবি ও বিবিজানকে অতিরিক্ত আরো তিন বিঘার জমির চাষাবাদের জন্য দখল দেন। তারা এই তিনবিঘা জমি প্রায় ৩০ বছর যাবত দখলে রেখেছেন।
এছাড়াও রাহেলা বিবির সাংসারিক দুর্দশা দেখে ভাই মফিজ মল্লিক নিজের মালিকানাধীন জমির উপর বসবাসের সুব্যবস্থা করে দেন। বোন রাহেলা বিবি ও এক কন্যা নিয়ে সেই বসতবাড়িতে রিতিমত প্রায় ৫/৭ বছর ধরে আরাম আয়েছে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু থাকতে দেয়া বসতবাড়ির আশেপাশের বড়িঘরের বা পাড়াপ্রতিবেশিদের সাথে নিয়মিত ঝগড়া বিবাদ করেন রাহেলা বিবি। একারনে পাড়াপ্রতিবেশিরা বারবার বোনের বিরুদ্ধে ভাই মফিজ মল্লিকের কাছে নালিশ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ভাই মফিজ মল্লিক তার আশ্রয়ে রাখা বোন রাহেলা বিবিকে স্থানান্তরিত করে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয়ার কথা বলেন। আর এতেই বিপত্তি ঘটে দুই বোন রাহেলা বিবি, বিবিজান ও তার দুই ছেলে পল্লি চিকিৎসক শফিক ও রিফিকের। তারা মফিজ মল্লিককে ফাঁসাতে নানান মিথ্যা অভিযোগ এনে দ্বন্দ্বে জড়ান বলে উল্টো অভিযোগ আনেন একমাত্র ভাই মফিজ মল্লিক।
মফিজ মল্লিক বলেন, আমি বরাবরই আমার বোনদের দেখভাল করে আসছি। ইতিমধ্যে আমার এক বোন আমার কাছে তার অংশের জমি বিক্রি করে দেন। আর দুই বোন আমার সম্পত্তির লোভ সামলাতে না পেরে তাদের ছেলেদের দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর পাইতারা করছেন। আমার বোনের ছেলেরা লাঠিসোঁটা ও বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আমাকে নিয়মিত ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিছুদিন আগে আমার বোনের ছেলে রফিক তার ভগ্নিপতিকে ছুরিকাঘাত করে আহত করেছে। গত রবিবার বোনের আরেক ছেলে পল্লি চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম আমার একমাত্র ছেলে মাহাবুব আলমকে তার দোকানে ডেকে নিয়ে মারধর করে। পরে নিজেরাই খামজখমের নাটক সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আমি এখন চরম আতংকের মধ্যে দিন পার করছি। শুনেছি তারা নাকি পুলিশের তদন্ত কেন্দ্রে মিথ্যা অভিযোগও দিয়েছেন। আমি এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। যদি আমার বোনেরা আমার কোন সম্পত্তির অংশ পাই তাহলে আমি সাথে সাথে দিয়ে দিবো।
এদিকে, মফিজ মল্লিকের বোন বিবিজান বলেন, আমার ভাই মফিজ মল্লিক আমার বোন রাহেলা বিবিকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এখন উচ্ছেদ করে দিচ্ছে। তবে মফিজ মল্লিকের তিন বিঘা জমি তারা ভোগদখলে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
রাহেলা বিবির একাধিক প্রতিবেশীদের অভিযোগ, রাহেলা বিবি প্রতিনিয়ত তাদের সাথে ঝগড়া বিবাদ করে। আশেপাশের সকলে তার প্রতি চরম বিরক্ত। তবে তারা মফিজ মল্লিকে বাড়িতে রাহেলা বিবির আশ্রয়ের কথা জানেন। তারা রাহেলা বিবিকে তার ভাইয়ের ভাসায় আশ্রয়ের পরামর্শও দিয়েছেন বলে জানান।
এবিষয়ে আউচপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ডিএম শাফি বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। তবে সকলের শান্তির লক্ষে উভয় পক্ষকে ডেকে মিমাংসার চেষ্টা করছি।
বাগমারা থানা ওসি তদন্ত তৌহিদুর রহমান বলেন, এঘটনায় থানায় অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে যদি অভিযোগ আসে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
হাট গাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবজাল হোসেন বলেন, খালগ্রামের মারামারির ঘটনায় এক পক্ষের অভিযোগ হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।