স্টাফ রিপোর্টার, সময় সংবাদ বিডি-
ঢাকাঃ ফেব্রুয়ারী আমাদের প্রেরণার প্রতীক গোলাম মোস্তফা মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করে থাকে একুশের বীর শহীদদের। আজো কেউ ভোলেনি বরং ৬৩ বছর আগে ভাষার জন্য জীবন দেয়া সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরন করে থাকে গোটা জাতি। এছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বেই যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে থাকে দিনটি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরাই পাকিস্তান সরকারে প্রাধান্য পায়। পাকিস্তান সরকার ঠিক করে উর্দু ভাষাকে সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করা হবে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ভাষার চল ছিলো খুবই কম।পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন) এই সিদ্ধান্তকে সেদিন মোটেই মেনে নিতে পারেনী। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবীতে তখন শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে। এই ঘোষণার ফলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। তখন পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল সবকিছু বে-আইনি ঘোষণা করে। ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সালে এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অনেক ছাত্র, সাধারণ জনতা ও আরো কিছু রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে একটি মিছিল শুরু বের করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-এর কাছে এলে পুলিশ মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।
গুলিতে নিহত হন সালাম,রফিক, বরকত, জব্বার সহ নাম না জানা আরো অনেকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সারা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ও তীব্র আকার ধারণ করে। অবশেষে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় বাংলা ও উর্দুভাষাকে সম-মর্যাদা দিতে। এই আন্দোলন পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করে দিয়েছিল। এই আন্দোলনের স্মৃতিতে পরবর্তীকালে গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনার, ঠিক সেই জায়গাতে যেখানে প্রাণ হারিয়েছিলেন রফিক, বরকত, জব্বাররা। ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটি বাংলাদেশে শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। শুধু এই ২১শে ফেব্রুয়ারী আজ বাংলাভাষায় কথা বলা মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশীদের জন্য একটি বেদনার দিন। একটি অহঙ্কার ও গৌরবোজ্জল দিন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার দিন। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস, অমর ২১শে ফেব্রুয়ারী। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতির জীবনে অবিস্মরণীয় ও চির ভাস্বরের দিন এই মহান ২১শে ফেব্রুয়ারী।
১৯৫২ সালের এই দিনটিতে বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষা রক্ষার দাবীতে রাজপথে যে বীরত্ব দেখিয়েছিলো সে কথা আজ কারো ভুলবার নয়। মাতৃভাষা রক্ষার জন্যে যে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছেন, যারা আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছেন, আমাদেরকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন, আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে আজো স্মরণ করি, তাদেরকে জানাই আমাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে হাজারো সালাম এবং তাদের আত্মার মাগফিরাতের জন্য রইলো অফুরন্ত দোয়া। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বার ও নাম না জানা অনেকে। তাদের রক্তে সেদিন শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল বর্ণমালা, আমার মায়ের ভাষা। বাংলা ভাষা রক্ষার যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অমর একুশে ফেব্রুয়ারী তাই আমাদের কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাংলার দামাল ছেলেরা যে ইতিহাস রচনা করেছিল, তা এখন শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়।
২১শে ফেব্রুয়ারী বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । শোকবহ্বলতা, বেদনা আর আত্মত্যাগের অহংকারে গৌরবোজ্জল ভাষা আন্দোলনের সেই শপথ যুগে যুগে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে,সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে। এখনো জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা যোগায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। তাই আসুন আমরা সবাই একটাই সপথ নেই, সকল ভেদাভেদ ভুলো আমাদের এই সুন্দর দেশটিকে আমরা আরো সুন্দর করে সাজাই